মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী বধ্যভূমিতে চন্দনাইশ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ স্মরণে বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর আগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। পরে চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরুর সভাপতিত্বে উপজেলা কৃষকলীগ সাধারণ সম্পাদক নবাব আলীর সঞ্চালনায় নারকীয় সেই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার বলেন, “১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত ও কালো দিবস। জাতিকে মেধাশূণ্য করার জন্য পাক হানাদার বাহিনী ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছিলো। মেধাবী শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সহ যাদের মেধা দিয়ে রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে এধরনের মেধাবী এবং বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী।
কোন কোন শহীদ পরিবার তাদের পরিবারের লাশ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি এমনকি শরীরের কোন অংশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতিকে মেধাশূণ্য করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলেও পাক হানাদার বাহিনীর সে অসৎ উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতি দিয়ে অন্যান্য যে কোন রাষ্ট্রের তুলনায় আমরা খুব স্বল্প সময়ে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।”
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দোহাজারী পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল শুক্কুর, সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদুর রহমান সুমন, দোহাজারী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ নাঈম উদ্দীন, উপসহকারী প্রকৌশলী তিলকানন্দ চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) তন্ময় চাকমা, লাইসেন্স পরিদর্শক বিধান বড়ুয়া, শহীদ পরিবারের সন্তান অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশীল কান্তি ভট্টাচার্য, মাষ্টার দীপক কান্তি ঘোষ, মাষ্টার রুপক কান্তি ঘোষ, ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার রুপস চক্রবর্তী, রঞ্জিত দাশ, মাষ্টার রাজীব চক্রবর্তী, শহীদ পরিবারের সন্তান উত্তম কান্তি সেন প্রমূখ।
প্রসঙ্গতঃ ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল, বাংলা ১৩৭৮ সালের ১৪ই বৈশাখ পাক হানাদার বাহিনী তৎকালিন পটিয়া (বর্তমানে চন্দনাইশ) থানার দোহাজারী’র জামিজুরী গ্রামে নারকীয় তান্ডবলীলা চালিয়ে ১৩ জন নিরপরাধ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এতে শহীদ হন ডাঃ বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্য, মাষ্টার প্রফুল্ল রঞ্জন ভট্টাচার্য, মাষ্টার মিলন ভট্টাচার্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, রেনু বালা ভট্টাচার্য, ডাঃ করুনা কুমার চৌধুরী, হরি রঞ্জন মজুমদার, মহেন্দ্র সেন, নগেদ্র ধুপী, রমনী দাশ, অমর চৌধুরী ও মনীদ্র দাশ। স্থানীয় এলাকাবাসী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো একত্রিত করে একটি গর্তে সমাধিস্থ করে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সুভাস মজুমদার (নলুুুয়া) ও মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাশ (আমিরাবাদ) এর দেহাবশেষও এখানে সমাধিস্থ করা হয়। স্বাধীনতার পর স্থানীয় ক’জন প্রগতিশীল তরুণের অক্লান্ত পরিশ্রমে সমাধিস্থলে গড়ে তোলা হয় বধ্যভূমি। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ রহিম জামিজুরী বধ্যভূমির ফলক উম্মোচন করেন। এরপর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি স্থলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেয়া হয়।
Leave a Reply